বৃষ্টিতে শেষ আয়ারল্যান্ডের আশা, সরাসরি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা

 


আয়ারল্যান্ডের জন্য কার্যত এ সিরিজের প্রতিটি ম্যাচই ছিল ‘ফাইনাল’। এ বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ নিতে বাংলাদেশকে ধবলধোলাই করার বিকল্প ছিল না তাদের। তবে তাদের সে আশা ভেসে গেল বৃষ্টিতে। চেমসফোর্ডে বাংলাদেশের দেওয়া ২৪৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ১৬.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান তুলেছিল আয়ারল্যান্ড, এরপরই নামে বৃষ্টি। ন্যূনতম ২০ ওভার হতে পারেনি বলে ফল আসেনি আর। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার দিকে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ফলে আয়ারল্যান্ডকে টপকে সরাসরি বিশ্বকাপে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা, আইরিশদের এখন পেরিয়ে আসতে হবে বাছাইপর্ব।

রান তাড়ায় আয়ারল্যান্ডের শুরুটা তেমন ভালো ছিল না, প্রথম ১০ ওভারে ৩৯ রান তুলতে তারা হারায় পল স্টার্লিং ও অ্যান্ডি বলবার্নির উইকেট। ছক্কা মারার পর শরীফুলকে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের হাতে ধরা পড়েন স্টার্লিং, বলবার্নি বোল্ড হন হাসান মাহমুদের দারুণ এক ইনসুইং ডেলিভারিতে। হ্যারি টেক্টর ও স্টিফেন ডোহেনির জুটি সে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাইজুল ইসলামকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ডোহেনি ফিরলে ভাঙে সে জুটি। তাইজুল অবশ্য আগের ওভারেই ফিরতি ক্যাচ ফেলেছিলেন টেক্টরের, সে ওভারে রানআউটের হাত থেকে বেঁচে যান ডোহেনিও। ডোহেনি ফেরার ঠিক পরের ওভারেই নামে বৃষ্টি, টেক্টরের সঙ্গে অপরাজিত ছিলেন লরকান টাকার।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ইনিংসকে ঠিক ‘মুশফিকময়’ বলা যায় না, তবে শেষ পর্যন্ত যে সফরকারীরা ২৪৬ রান পর্যন্ত গেছে, তাতে মূল অবদান মুশফিকেরই। এ দিনই ৩৬ পূর্ণ করা মুশফিক করেছেন ৬১ রান, তবে তাঁর ওই ইনিংস না হলে বাংলাদেশ থামতে পারত আরও আগেই। মেঘলা আকাশের নিচে আইরিশ পেসাররা শুরুতে পেয়েছেন সুইং, সঙ্গে ছিল সিম মুভমেন্টও। বাংলাদেশের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের ছয়জনই মোটামুটি ভালো শুরু পেলেও করলেও ফিফটির দেখা পান শুধু মুশফিকই।  সর্বোচ্চ ৬৫ রানের জুটিটি আসে ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিক ও মিরাজের মধ্যে।  



পেসারদের জন্য মুভমেন্ট থাকলেও উইকেটে বল ব্যাটে আসছিল ভালোভাবে, আইরিশ পেসাররা শুরুতে ঠিক লাইন-লেংথে ধারাবাহিকও ছিলেন না। বাংলাদেশ অবশ্য ধাক্কা খায় শুরুতেই—আইপিএল থেকে ফেরা জশ লিটলের ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কারে এলবিডব্লু হন আইপিএল-ফেরত লিটন দাস। অধিনায়ক তামিম ইকবাল দেখেশুনেই খেলছিলেন, কিন্তু মার্ক অ্যাডাইরের অনেক বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে কট-বিহাইন্ড হন। আয়ারল্যান্ড সে উইকেট পায় রিভিউ নিয়ে।

নাজমুল হোসেন ও সাকিব আল হাসান সে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন অনেকটাই, সুযোগ পেলে শটও খেলছিলেন। তাঁদের প্রতি-আক্রমণে প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই ৫০ ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তবে অতি-আত্মবিশ্বাসী সাকিব উইকেট ছুড়ে আসেন গ্রাহাম হিউমের লেংথ বলে আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে। সেটি পুরো মিস করে হন বোল্ড, ২১ বলে ২০ রান করেন ৪টি চারে।

সাকিবের আউটে তাই আবার ছন্দপতন, এবার পাঁচে নামা তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে ইনিংস পুনর্গঠনে নামেন নাজমুল। দুজনের জুটিতে ওঠে ৬৩ বলে ৫০ রান। সেটি আর বড় হয়নি কার্টিস ক্যাম্ফারের নিরীহ লেংথ বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে নাজমুল ক্যাচ দেওয়াতে। ৬৬ বলে ৪৪ রান করেই থামেন নাজমুল, শিগগির তাঁকে অনুসরণ করেন হৃদয়। তিনি হিউমের শিকার, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দেন তিনি ২৭ রান করে।



লড়াইটা এরপর করতে হয় মুশফিককে। জর্জ ডকরেলকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তোলার আগে তাঁকে ভালোই সঙ্গ দেন মিরাজ, যিনি ৩৪ বলে করেন ২৭ রান। তাইজুল রান তোলার চেয়ে মুশফিককে সঙ্গ দেওয়ার দিকেই সব মনযোগ দেন। এর মধ্যেই ফিফটি পান মুশফিক, বাংলাদেশও পেরিয়ে যায় ২০০। তবে নিজের শেষ স্পেলে ফেরা লিটলের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মুশফিক ক্যাচ দিলে আরও বড় স্কোরের আশা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। তবুও আড়াই শর কাছাকাছি বাংলাদেশের স্কোর যায় তাইজুল ইসলামের ১৪ ও শরীফুল ইসলামের ১৫ বলে ১৬ রানের ইনিংসে। বাংলাদেশ ইনিংসে একমাত্র ছক্কাটি মারেন শরীফুলই।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url